শীতের ছুটিতে কী করা যায় তার পরিকল্পনা চলছিল অনেক দিন যাবতই , ধারেকাছের তুলনামূলক কম ঠান্ডা এলাকা হিসেবে Florida-র নাম এলো স্বভাবতই. আমি তো রাজি হব হব করে আবার পিছিয়েই গেলাম, কপর্দক্শুন্য মানুষ , না জানি বেড়াতে গিয়ে ঋণের বোঝা মাথায় চেপে বসে কিনা. কিন্তু যেই না ছুটি আরম্ভ হলো, আর তো টিকতে পারিনা, ক্যাম্পাস জনমানবহীন, বরফে ঢাকা রাস্তাঘাট, নাহ , আর থাকা যায় না এর মাঝে. কিছু একটা করতেই হবে. মিশু আর নওরিনের সাথে ত্বরিত যোগাযোগ করলাম, বাকি বন্ধুরা সবাই দেশে, আমরা কটি অসহায় পড়ে আছি ঠান্ডার মাঝে, একটু সবুজ চাই, আর একটু সতেজ হাওয়া . ব্যাস, ওই দিনই ticket কেটে ফেললাম. কিন্তু কই থাকব, কী করব, কই ঘুরব তার কোনো খবর নেই. গুগল থাকতে আর কী লাগে ! কিছুক্ষণ গুগল এ ঘাটাঘাটি করে মিশুর উপর ভরসা করে দিলাম ঘুম. Orlando নাকি Key west এই নিয়ে সংশয় , অবশেষে Key west জয়যুক্ত হলো. সমুদ্রের কাছে কি আর অন্য কিছু পাত্তা পায় :)
৩১ তারিখ ভোরবেলা আমার ফ্লাইট, গভীর রাতে airport এ গিয়ে বসে থাকা, Baltimore থেকে Cincinnati, তারপর Miami . মায়ামি তে নেমেই আহ কি শান্তি, বরফে ঢাকা ধুসর পথ দেখতে দেখতে ক্লান্ত চোখ একটু সবুজের দেখা পেল, আর গাছগুলো মনে করিয়ে দিল দেশের কথা, ক্রান্তীয় অঞ্চল , কাজেই আমার চেনা জগতের সাথে কিছুটা মিল তো থাকবেই, পাম আর নারিকেল গাছের সারি পথের ধার ঘেঁষে . বাতাস উষ্ণ না হলেও কনকনে ঠান্ডা নয়. হোটেল এ গেলাম একটা taxicab এ চেপে, La Quinta Inn নামক একটা ছোটখাটো সাজানো গুছানো থাকার জায়গা, একটা swimming পুল ও আছে, যদিও আমরা কেউ সাঁতার জানিনা :( পানিতে পা ভিজিয়ে বসে থাকায় সার. ভোজনপর্ব শেষে এবার মায়ামি সৈকত এ যাবার পালা, কিন্তু যাবার উপায় টা কী ! আবার গুগল ভরসা, ছুটির আমেজ, তাই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এর ত্রাহি অবস্থা . বাস আসে এক ঘন্টা পর পর, বাস স্ট্যান্ড এ দাঁড়িয়ে , ফুটপাথে বসে গলা ছেড়ে গান গেয়ে সময় কাটিয়ে দিলাম, তারপর বাস এর দেখা মিলল একটা, driver কে জিগেস করে নিলাম আসলেই এই বাস আমাদের south beach এ নিয়ে যাবে কিনা, আমাদের মত বাকি পর্যটকদের একই দশা, সবাই রীতিমত দ্বিধান্বিত , কেউই আসলে এলাকা চেনেনা , কিন্তু গন্তব্য সবারই south beach , দুটা বাস পরিবর্তন করে নেমে গেলাম Lincoln rd mall এ. যাকে বলে খানদানি এলাকা, চারিদিকে টাকার গন্ধ, আর একটু আকটু ইংলিশ শোনা গেলেও অধিকাংশই দেখি ' hola , como estas ' গোত্র, এ কোন জায়গায় এলাম রে বাবা ! লোকে দেখি ইংলিশ বলে না. Lincoln চত্বরে যেন মেলা বসেছে, লোকে লোকারণ্য. গ্রাম থেকে প্রথমবার ঢাকায় আসা মানুষের মত লাল লাল নীল নীল বাতি দেখলাম, নিজেও থাকি একটা মফস্সল ধাচের এলাকায়, এখানে এসে বুঝলাম আসলেই কাপড় চোপর না পরাটাই fasion . ছেঁড়া ফাটা জামা মানেই সেটা নিশ্চয়ই নামী দামী কোনো designer ব্র্যান্ড . মজাই লাগলো, বছর শেষের রাত, এটুকু তামাশা না দেখলে কি আর চলে :)
হাঁটাহাঁটি করে আমাদের খিদা লেগে গেল, অনেক খুঁজে পেতে আমাদের সাধ্যের মাঝে একটা দোকান পেলাম, গালভরা নামের একটা খাবার অর্ডার দিলাম, আসলে ভাত আর মুরগি, খেতে অসাধারণ, সাথে লেমনেড. রাস্তার ধরে গাছের নিচে টেবিল পেতে খাবার আয়োজন, চারিদিকে বেশ জোরেশোরে গান বাজনা চলছে, সাথে নাচানাচিও , আমরা কেন জানি ঠিক সাহস করতে পারলাম না :( এর মাঝে কামাল ভাই ও তার দলবল চলে এলো, ১২ তা প্রায় বাজে, বড় একটা বিল্ডিং এর ডিজিটাল ডিসপ্লেতে count down শুরু হয়ে গেছে, দিলাম সব দৌড় beach বরাবর, ১২ টা বাজতেই আকাশজুড়ে আতশবাজি, আর পরস্পরকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানো. আর তার সাথে ক্যামেরার ক্লিক ক্লিক. এই শীতের মাঝেও দেখি কিছু মানুষ সোজা সাগরের পানিতে ঝাপ দিল, আমরা পা ভিজিয়েই ক্ষান্ত . এক মেয়ে অনেকগুলো সাদা গোলাপ সমুদ্রে ছুড়ে ছুড়ে দিল, একের পর এক, মনে হয় প্রতি গোলাপের সাথে সাথে কিছু wish করলো . সাগরের ঢেউ ফুলগুলো আবার ভাসিয়ে আমাদের পায়ের কাছেই এনে ফেলল. সাম্বা প্যারেড আর আতশবাজির পর সৈকত অনেকটাই ঠান্ডা, চুপচাপ, এবার আমাদের পালা, শুরু হলো তারস্বরে বাংলা গানের আসর. যা যা মনে পড়লো গলা ছেড়ে গাইতে থাকলাম তিনজনে মিলে. পূর্নিমা রাতে সাগরপারে এমন সঙ্গীত সাধনার অভিজ্ঞতা জীবনে আর হবে কিনা কে জানে . না হয় ফাটা বাঁশের মতই আওয়াজ দিলাম, কিন্তু নতুন বছরে পুরনো গানগুলো কত পুরনো স্মৃতি নতুন করে মনে করিয়ে দিল.
দারুন হয়েছে সোপান। www.sachalayatan.com এ যেয়ে এই লেখাটাই আবার দাও। বাংলা ব্লগ কমিউনিটি ব্লগে দিলে আরও অনেক পাঠক পাবে
ReplyDeletereally touching.
ReplyDelete